কিভাবে ইপাব (epub) বানাতে হয়?

বইপ্রেমিক বাংলাভাষীদের মধ্যে ইবুক (ebook) ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইবুকের প্রচলিত ফরম্যাটগুলোর মধ্যে রয়েছে পিডিএফ (pdf), ইপাব (epub), মোবি (mobi) ইত্যাদি। এর মধ্যে ইপাব (epub) বইয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। পঠনযোগ্যতার দিক থেকে থেকে পিডিএফ বইয়ের থেকে ইপাবের সুবিধা অনেক বেশি। তাই আজকাল তরুনরা ইপাব পড়তে ও তৈরি করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাদের জন্যই আমার এই লেখা।

ইপাব কী?

ইপাবের (epub) পূর্ণরূপ ইলেকট্রনিক পাবলিকেশন। এটি একটি জনপ্রিয় ফাইল ফরম্যাট। ইপাব ফাইল মূলত একটি আর্কাইভ ফাইল যার মধ্যে একটি এইচটিএমএল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ফাইল ও ছবি থাকে। পিডিএফ থেকে এর সুবিধা অনেক বেশি। পুরো বই স্ক্যানের বদলে লেখাগুলো টাইপ করা থাকে। ফলে এর আকার পিডিএফ ফাইলের থেকে অনেক কম হয়। পিডিএফ ফাইল যেমন মোবাইলে পড়া যায় তেমনি ইপাব (epub) ফাইল মোবাইল, ট্যাবলেট বা ডেস্কটপে পড়া যায়। ইপাবের মতো আরেকটি জনপ্রিয় ফাইল ফরম্যাট হচ্ছে মোবি (mobi)।

ইপাব পড়তে আলাদা অ্যাপ বা সফটওয়্যার লাগে?

জ্বী, পিডিএফ পড়তে যেমন অ্যাডোবি রিডার বা গুগল ড্রাইভের বিল্ট ইন রিডার ব্যবহার করি তেমনি ইপাব পড়তেও আলাদা সফটওয়্যার বা অ্যাপ লাগে।
ক. অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ইপাব পড়তে Moon+ Reader Pro আমার কাছে সব থেকে ভালো মনে হয়েছে। প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া Librera Reader, Lithium ePUB Reader ও গুগল Play Books ও বেশ ভালো। মুন+ রিডার প্রো পাবেন এই লিঙ্কে
খ. কম্পিউটারে Sumatra PDF সফটওয়্যার ব্যবহার করেও পিডিএফের পাশাপাশি ইপাব ও মোবি ভালোভাবেই পড়া যায়।
গ. আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহারকারীরা ibooks অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

ইপাবের সুবিধা

ক. ইপাবের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলেও ডিভাইসের স্ক্রিন সাইজের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারে। অর্থাৎ মোবাইল ডিভাইসে পিডিএফের মতো জুম করে পড়তে হবে না। স্ক্রিন ছোট হোক কিংবা বড়, বই পড়তে কোনো সমস্যা হবে না।
খ. বই থেকে লেখা কপি করা যায় এবং ইচ্ছেমতো শেয়ারও করা যায়।
গ. ইপাবের আকার খুব ছোট হয়। তাই ডিভাইসের মেমোরি অপচয় কম হয়।
ঘ. বইয়ের ফন্ট পরিবর্তন করা যায়। পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ড ও ফন্ট কালারও পছন্দমতো পরিবর্তন করা যায়। ডে/নাইট মোড চেঞ্জ করা যায়। রিডারের থিম ও ব্লু লাইট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ঙ. গুরুত্বপূর্ণ লাইন মার্ক করা যায় এবং সেখানে কমেন্ট বা নোটও যুক্ত করা যায়। পছন্দের কোনো পাতা বুকমার্ক করে রাখা যায়। এগুলো পরে আবার খুব সহজেই খুঁজেও পাওয়া যায়।
চ. সার্চ করে সহজেই বই থেকে কোনও তথ্য বের করা যায়।

ইপাব বই যেভাবে বানাবেন

প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার

প্রক্রিয়া

ইপাব বই বানাতে হলে প্রথমে বইয়ের লেখাগুলো টেক্সট আকারে নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এজন্য আগে বইটিকে স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে পিডিএফ করে নিতে হবে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে অধিকাংশ বইয়েরই পিডিএফ পাওয়া যায়। পিডিএফ থেকে OCR (অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন) করে আপনাকে টেক্সট ফরম্যাটে নিয়ে আসতে হবে। OCR হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ছবি বা পিডিএফ ফাইল ফরম্যাট থেকে লেখাগুলো টেক্সটে রূপান্তর করা যায়। এখন বাংলা বইও OCR করা যায়।

আমরা OCR করতে গুগল ড্রাইভকে ব্যবহার করবো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গুগল ড্রাইভে একসাথে দুই মেগাবাইটের বেশি সাইজের পিডিএফকে OCR করা যায় না। তাই আপনার প্রথম কাজ হবে আপনার পিডিএফ ফাইলটিকে দুই মেগাবাইট করে কয়েকটা ভাগে বিভক্ত করা। এজন্য অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট প্রো সফটওয়্যারটি প্রয়োজন হবে। উপরে দেওয়া লিংক থেকে এটি ডাউনলোড করে নিন। এরপর এটি ইন্সটল করে ওপেন করুন। সফটওয়্যারটি দিয়ে বইটি ওপেন করে Tools > Pages > Split Document -এ যান। সেখানে  Max MB ২ রেখে ওকে -তে ক্লিক করুন। এতে আপনার পিডিএফ ফাইলটি ২ মেগাবাইটের কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। তারপর সবগুলো ফাইল গুগল ড্রাইভে আপলোড করুন।

এরপরে ড্রাইভে থাকা ফাইলটি Open with > Google Docs ক্লিক করে OCR করে নিন। এরপরে টেক্সট বা লেখাগুলো মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা অন্য কোথাও সংরক্ষণ করে রাখুন। এখানে একটা সমস্যা তৈরি হয়। সেটি হচ্ছে OCR করে পাওয়া টেক্সটগুলোতে অনেক ভুল থাকে। বইয়ের লেখা ঘোলাটে হলে কোনও লাইনও বাদ পরে যেতে পারে।

এবারে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা অন্য কোনও টেক্সট এডিটরে লেখা সংশোধন করতে হবে। একটি শতভাগ নির্ভুল ইপাব বই তৈরি করতে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবার ও-কার ঠিক করতে হবে, ড্রাইভ থেকে OCR করলে এগুলো ভেঙ্গে যায়। এমনিতে দেখলে ভাঙ্গা দেখায় না। তবে ইপাব শুনতে গেলে সমস্যা হয়। ফাইন্ড অ্যান্ড রিপ্লেস থেকে ফাইন্ডে প্রথমে আ-কার এরপর এ-কার দিন (া ে) [স্পেস ছাড়া] আর রিপ্লেসে ও-কার (ো) দিয়ে Replace All দিয়ে দিন। ফাইন্ড অ্যান্ড রিপ্লেস অপশন একই রকম ভুল সংশোধনে কাজে দেয়। এরপর সব টেক্সট সিলেক্ট (Ctrl+A) করে স্টাইলে গিয়ে নরমাল করে নিন। এরপরে আবার একইভাবে সব সিলেক্ট করে টেক্সট অ্যালাইন Justify করে নিতে পারেন। এতে ইপাব সুন্দর দেখাবে।

পুরো সংশোধন কাজটি সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগবে। কাজটি হয়ে গেলে এবার ইপাব বানাতে হবে। এজন্য আলাদা একটি সফটওয়্যার লাগবে। উপরে দেওয়া লিংক থেকে Sigil বা Calibre যে কোনও একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নিন। তবে আমি রিকমেন্ড করবো Sigil ব্যবহারের। এটি ব্যবহার করা খুব সোজা এবং এটাতে ইপাব সুন্দর হয়। Table of contents ও এক ক্লিকেই বানিয়ে ফেলা যায়। এটা দিয়ে ইপাব তৈরি করে সেভ করুন। তবে যদি মোবি (mobi) বানাতে চান তবে Calibre সফটওয়ার লাগবে। এক ফরম্যাটের ইবুক থেকে অন্য ফরম্যাটের ইবুকে কনভার্ট করতে এই সফটওয়্যারটি অনন্য। মোবি ফরম্যাটে নিতে Sigil সফটওয়ার দিয়ে যে ইবুকটি বানালেন সেটিকে ওপেন করুন। সফটওয়্যারের  উপরে বামপাশে Add books -এ ক্লিক করে বই ওপেন করতে পারবেন। এবার Convert Books -এ গিয়ে একদম উপরে আউটপুট ফরম্যাট দেখতে পাবেন। সেখানে যে ফরম্যাটে নিতে চান তা দিয়ে ওকে -তে ক্লিক করুন। এবার দেখুন আপনার কনভার্ট করা বইটি পূর্বনির্ধারিত ফোল্ডারে সেভ হয়ে গেছে।

বেশ খাটাখাটনি করে টেক্সটগুলো ঠিক করার পর আপনাকে ইপাব বানাতে হবে। এক্ষেত্রে যে সফটওয়্যারটা দরকার হবে সেটি হলো Sigil। ইপাব তৈরির জন্য এটা বেস্ট। Calibre দিয়েও ইপাব বানানো যায়, তবে তেমন সুন্দর হয় না। Sigil ব্যবহার করা খুবই সোজা, আপনি নিজেই পারবেন। এটা দিয়ে এক ক্লিকেই Table of Contents তৈরি করে ফেলা যায়। ইপাব বানিয়ে Save করে ফেলুন।

পরবর্তী কোনও পোস্টে মোবাইলে কীভাবে ইপাব বানাতে পারেন তা নিয়ে লিখবো। এভাবে ইপাব বানাতে গিয়ে কোনও সমস্যা হলে ইউটিউবে ভিডিও দেখতে পারেন।

এতো খাটাখাটুনি করে ইপাব তৈরি করার আগে আপনি নিশ্চয়ই দেখে নিতে চাইবেন যে, বইটি আগেই কেউ তৈরি করেছে কিনা! অন্যথায় বই তৈরির পর বইটি অনলাইনে পেয়ে গেলে আক্ষেপ হতে পারে। এই টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে অসংখ্য ইপাব বই আছে। চ্যানেলে জয়েন হয়ে উপরে থাকা সার্চ বক্সে কাঙ্ক্ষিত বইয়ের নাম বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url